অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীর আরও তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এটি তাদের তৃতীয় দফার রিমান্ড। মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার তাদের চার দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই তিনজন হলেন কক্সবাজারের টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস। এর আগে এই তিন সাক্ষীকে দ্বিতীয় দফায় চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল র্যাব। সোমবার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষ হয়।
৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ হয়ে হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফিরছিলেন সিনহা। পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে তাদের আরেক সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। দুজনই এখন জামিনে মুক্ত আছেন।
ওই ঘটনায় টেকনাফ থানায় করা পুলিশের মামলায় সাক্ষী করা হয় মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন বাসিন্দা নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াসকে। পরে তাঁদের তিনজনকে সিনহার বোনের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রথম দফায় এই তিন সাক্ষীকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র্যাবের তদন্তকারীরা। ২৩ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁদের দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় র্যাবের গাড়িতে করে তিন আসামিকে নেওয়া হয় কক্সবাজার আদালতে। এরপর তাঁদের নেওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে। দুপুর পৌনে একটার দিকে তাঁদের গাড়িতে তুলে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগের রিমান্ডে মারিশবুনিয়া গ্রামের এই তিন আসামি সিনহা হত্যার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আরও তথ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরে তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সিনহা সঙ্গী সিফাতকে নিয়ে মারিশবুনিয়ার পাহাড়ে ওঠে ভিডিওচিত্র ধারণ করছিলেন। এ সময় নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস লোকজনকে জড়ো করে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পাশের মসজিদের মাইক থেকে সিনহা ও সিফাতকে পাহাড় থেকে নেমে তাঁদের সামনে গিয়ে ‘ডাকাত না’ প্রমাণ দিতে বলেন। সিনহা নেমে গিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে মেরিন ড্রাইভের দিকে চলে যান। এ ঘটনার আগে ও পরে সিনহা সম্পর্কে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে নানা তথ্য দেন এই তিন গ্রামবাসী।
বর্তমানে সিনহা হত্যা মামলার ১৩ আসামির মধ্যে একাধিকবার রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। তাঁরা পাঁচজন বর্তমানে জেলা কারাগারে আছেন।
মামলার অন্যতম প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ চতুর্থ দফায় একদিনের রিমান্ডে আছেন। মঙ্গলবার তাঁর রিমান্ডের সময় শেষ হবে। সিনহা হত্যা মামলার অপর চার আসামি টেকনাফ থানার এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে আছেন।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়ালজানি এলাকার পদ্মার চরে পুঁতে রাখা এক কিশোরের দুই হাত বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত লাশ গতকাল সোমবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে সকালে এলাকার লোকজন লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুলিশকে জানায়। লাশটি গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ সুজন খান ওরফে মিরাজের (১৬)।
সুজনের পরিবারের দাবি, গত বৃহস্পতিবার সুজনকে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তার খোঁজ নেই। খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে লাশটি সুজনের বলে শনাক্ত করেন। তবে এর আগে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ীতে পাঠায়।
সুজন গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের সিরাজ খার ছেলে। সে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।
পুলিশ ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে এলাকার কয়েকজন পদ্মার চরে পুঁতে রাখা একটি লাশ দেখতে পান। তাঁরা বিষয়টি দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় কিশোরের দুই হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ছাড়া শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩-৪টি আঘাতের চিহ্ন আছে।
সুজনের আত্মীয় ও দেবগ্রাম ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়িতে খাবার খাচ্ছিল সুজন। মুঠোফোনে কারও কল পেয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় বাড়িতে মা-বাবা ছিলেন না। ছোট বোনকে বলেছিল জরুরি কাজ আছে। এর পর থেকে তার আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন শুক্রবার সুজনের বাবা সিরাজ খা গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। লাশ উদ্ধারের পর তাঁরা সুজনের কপালে থাকা কাটা দাগ, পরনের প্যান্টসহ অন্যান্য চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হয়েছেন, লাশটি সুজনের। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।
সুজনের বড় ভাই সেলিম খার ভাষ্য, ‘গত বছর নদী ভাঙনের কারণে দেবগ্রাম থেকে বাড়ি ভেঙে উত্তর চর পাচুরিয়ায় বাড়ি করি। আমাদের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। কারা সুজনকে ডেকে নিয়ে এভাবে হত্যা করল, বুঝতে পারছি না।’ তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-তায়াবীর বলেন, দুই হাত বিচ্ছিন্ন কিশোরের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। তখন তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। তবে পরিবার লাশটি শনাক্ত করলে গতকাল রাতেই কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে।
ভিয়েতনামফেরত ৮১ জন অভিবাসী শ্রমিককে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে এই শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে বাড়িতে নয় পুলিশ তাঁদের সকালে আদালতে নেয়।
তুরাগ থানার পুলিশ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানো এই শ্রমিকেরা গত ১৮ আগস্ট ভিয়েতনাম থেকে দেশে ফেরেন। বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরার পর থেকে দফায় দফায় তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন। কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার দিন দুয়েক আগে থেকে তাঁরা যেখানে ছিলেন, সেখানে পুলিশের তৎপরতা বাড়ে।
জানা গেছে, পুলিশ এসে ভিয়েতনাম প্রবাসীদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করেছে।
কোয়ারেন্টিনে থাকা অভিবাসী শ্রমিক মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩০ আগস্ট পুলিশ তাঁদের আদালতে নেওয়া হবে বলে জানান। কেন নেওয়া হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি তাঁরা। শ্রমিকেরা প্রত্যেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ভিয়েতনামে যান। দালালেরা বলেছিলেন, ভিয়েতনামে সোফা ফ্যাক্টরিতে কাজ দেবেন। কিন্তু সেই কাজ তাঁরা পাননি। ওখানে পৌঁছানোর পর ছোটখাটো দু-চারটে কাজ দিলেও কোনোটিই দীর্ঘমেয়াদী ছিল না। একপর্যায়ে তিনিসহ আরও অনেকে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাঁরা আশা করছিলেন, প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে মধ্য জুলাইতে এই শ্রমিকেরা ভিয়েতনামের ভুং তাও থেকে এক হাজার ৬৭৭ কিলোমিটার দূরের হ্যানয়ে এসে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনাম সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা ওই ব্যক্তিরা ভিয়েতনামে কারাগারে ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছিল ভিয়েতনাম থেকে।
দালালের খপ্পরে পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের প্রত্যেকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে ভিয়েতনামে যান। শ্রমিকেরা বলছেন, তাঁরা কোনো অন্যায় করেননি। পুলিশি তৎপরতার কারণও বুঝতে পারছেন না।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে পাঠানো ২১৯ জনকেও দেশে ফেরার পর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার তাঁদের ক্ষমা করে দিলেও, দেশে এসে মুক্তি পাননি তাঁরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৯ মামলার আসামি রাব্বীকে (২১) ফের গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। তাঁকে রাজধানীর কদমতলার একটি বাসায় পাওয়া গেছে। সবুজবাগ থানা-পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাসাটি শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজানের বোনের।
পুলিশ জানিয়েছে, রাব্বীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাঁর ভাই সাব্বির ও সুমন নামের আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল থেকে পালান রাব্বী।
অভিযোগ উঠছে, রাব্বী যখন পালাচ্ছিলেন তখন পুলিশের পাহারারত সদস্যরা ওয়ার্ডের বাইরের ফটকে বসে গল্পগুজব করছিলেন। আর আসামির সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বজন।
সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাব্বীর বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতির চেষ্টা, মারামারিসহ মোট ১৯টি মামলা আছে।
রাজশাহীতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি থেকে ৫১ কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৫–এর মোল্লাপাড়ার একটি দল। কুরিয়ারে প্রেরকের নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘মেয়র, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন’।
আটক ছয়জন হলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারী এলাকার দুলাল (৩০), তানোরের দেউরাতলা এলাকার তোফাজ্জল হোসেন (২৪), তানোরের সেদায়ের এলাকার বাদশা (৩২), তানোরের সিধাইড় এলাকার সোহান আলী (২১), ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বেলতলি এলাকার মুকতুল হোসেন (৩২) ও একই উপজেলার মাদলা এলাকার বাপ্পি (৩০)।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পারেন যে রাজশাহীতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে গাঁজা আসবে। তবে রোববার কুমিল্লা থেকে যেসব মালামাল আসে, সেখানে গাঁজা ছিল না। সন্ধ্যার দিকে প্রথমে পাঁচজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এর মধ্যে যার এই মাল গ্রহণ করার কথা ছিল, সেই মুকতুল পালিয়ে যান। পরে রাতে তাঁকে নাটোর থেকে আটক করা হয়।
র্যাবের দাবি, মুকতুল ও বাদশা কুমিল্লা থেকে এই মালামাল বুকিং করেছিলেন। কুমিল্লায় বুকিংকারী ব্যক্তির নাম দেখানো হয়েছে হুমায়ুন কবীর। আটককৃতরা জানিয়েছেন, হুমায়ুন কবীর নামে আসলে কেউ নেই। ওই নামে বাদশা মালামাল বুকিং করেছিলেন। কাঠের খাটের দুই বক্সের মধ্যে বিশেষ কায়দায় গাঁজাগুলো ১৮টি প্যাকেটে করে কুমিল্লা থেকে রাজশাহী আনা হয়। প্রেরকের এখানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কথা বলা হয়। ডাইনিং টেবিল ও ছয়টি কাঠের চেয়ার ছিল ওই গাড়িতে।
র্যাব-৫–এর অধিনায়ক এটিএম মাইনুল ইসলাম বলেন, আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে একই থানায় মামলা করবে। এই কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লা সিটি মেয়রের নাম দিলে হয়তো মালামাল পাঠানো সহজ হবে—এমন একটা সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক বলেন, ‘কে বা কারা পাঠিয়েছে, সেটা বলতে পারছি না। কুরিয়ার সার্ভিস তো আর যাচাই করে না। যে কেউ যেকারো নাম ব্যবহার করতে পারেন। এটা মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল। যেহেতু তাঁদের আটক করা হয়েছে, তাই তাঁরাই এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ মামলার এক আসামি পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁর নাম রাব্বী (২১)। সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তিনজন আসামি পালানোর ঘটনা ঘটল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে রাব্বী চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে ভাইয়ের কাঁধে ভর দিয়ে তিনি হাসপাতালের বিছানা ছাড়েন। এরপর পালিয়ে যান।
অভিযোগ উঠছে, রাব্বী যখন পালাচ্ছিলেন তখন পুলিশের পাহারারত সদস্যরা ওয়ার্ডের বাইরের ফটকে বসে গল্পগুজব করছিলেন। আর আসামির সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বজন। পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এখন রাব্বীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
ওসি মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, রাব্বীর বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতির চেষ্টা, মারামারিসহ মোট ১৯টি মামলা আছে। এর আগে ৬ আগস্ট আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের এক কয়েদি কাশিমপুর কারাগার থেকে পালান।
এ ছাড়া গত শনিবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে পালিয়েছিলেন মাদক মামলার আসামি মো. মিন্টু মিয়া। পরে অবশ্য তিনি ধরা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলে গৃহবধূকে হত্যার দায়ে স্বামী ও শ্বশুরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা পারভীন সোমবার এ রায় দেন।
দণ্ডিতরা হলেন ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা গ্রামের জহিরুল ইসলাম (২৫) ও তাঁর বাবা মজনু মিয়া (৫৫)।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) একেএম নাছিমুল আক্তার বলেন, জহিরুল ইসলামের সঙ্গে একই উপজেলার কুঠিবয়রা গ্রামের তাসলিমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে তাসলিমার ওপর নির্যাতন করা হতো। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর তাসলিমাকে হত্যা করে লাশ যমুনা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এর তিন দিন পর ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ঘাট থেকে তাসলিমার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর বাবা সলিম উদ্দিন বাদী হয়ে একই বছরের ১ ডিসেম্বর থানায় মামলা করেন। পুলিশ বাবা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জামিনে বের হয়ে তাঁরা পলাতক আছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই আজ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
খুলনার কিশোরী লামিয়ার (১৪) গুলিবিদ্ধ পায়ে অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার পরবর্তী পর্যবেক্ষণে আছে।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মেহেদী নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, লামিয়ার অস্ত্রোপচারটি বেশ জটিল ছিল। গুলিটি তার হাড়ের ভেতরে চলে যায়। এটি বের করতে দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচার চলে।
লামিয়ার মামা তরিকুল ইসলাম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার গুলি লাগার পর থেকেই ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছিল লামিয়া। গুলি লাগার জায়গায় রক্ত পড়া বন্ধ হলেও যন্ত্রণায় সে ঘুমাতে পারছিল না। ডাক্তাররা বলেছিলেন অপারেশন করায় জটিলতা আছে, এ জন্য দেরি হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আজ সকাল নয়টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।’
এদিকে গুলির ঘটনায় গত শনিবার খুলনা সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা করেন ঠিকাদার ইউসুফ আলী। তাঁর ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে লামিয়ার পায়ে লাগে। রোববার ঠিকাদারের করা চাঁদাবাজির মামলার ঘটনায় পুলিশ চার তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। এই চারজন হলেন যশোরের কেশবপুরের হদ গ্রামের মোহাম্মদ আবু সাঈদ (২২), বাগেরহাটের রামপালের বারুইপাড়া গ্রামের মো. ইসমাইল মল্লিক (২৭), খুলনার কয়রার গোগড়া গ্রামের মো. মেহেদী হাসান (২১) ও খুলনার দৌলতপুরের পাবলা এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম (২৩)।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটির আরও তদন্ত করব।’
ঠিকাদার ইউসুফ আলীর করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ঠিকাদারির একটি কাজ নিয়ে ওই চারজন তাঁর বাড়িতে এসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তখন তিনি তাঁদের চাঁদার টাকা দেবেন বলে ঘরের ভেতর গিয়ে পিস্তল আনেন। পিস্তল দেখে ওই চারজন দৌড় দেন। তখন ঠিকাদার দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। সেই গুলির একটি লামিয়ার পায়ে লাগে।
তবে ঠিকাদার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে মামলায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রেপ্তার চার তরুণের স্বজনেরা। সাইফুলের মামা মো. সোহেল অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই ছেলে গত কয়েক দিন ধরে ফোন দিয়ে মেয়ের নম্বরটি বন্ধ পান। তিনি জানতে পারেন, মেয়েটিকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন ঠিকাদার। এ অবস্থায় তিন বন্ধুকে নিয়ে তিনি ঠিকাদারের বাড়িতে যান। এ সময় উত্তেজিত হয়ে ঠিকাদার ইউসুফ আলী প্রথমে তাদের গালিগালাজ করেন এবং পরে পিস্তল দিয়ে তাড়া দেন।
খুলনার ডুমুরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সময় সিরাজুল ইসলাম (৪৭) নামের একজন নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বেতাগ্রাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ৬ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর চাচাতো ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সকালে ওই জমিতে সিরাজুল ইসলাম গোয়ালঘর তৈরি করতে যান। এ সময় তাঁর চাচাতো ভাইয়েরা বাধা দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে মাথায় ইটের আঘাতে সিরাজুল ইসলাম মারা যান।
ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সিরাজুল ইসলামের চাচাতো ভাই হাসান গাজী ও তাঁর মা ফুলমতি বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ডুমুরিয়া থানার ওসি।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের আরও একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এ আদেশ দেন। এটি তাঁর চতুর্থ দফার রিমান্ড।
মামলার তদন্ত সংস্থা কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন না। পরে তাঁকে একদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
প্রদীপ কুমার দাশকে দুপুর দেড়টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আড়াইটার দিকে তাঁকে কক্সবাজারে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে সকালে এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে র্যাবের গাড়িতে করে তাঁকে কক্সবাজার আদালতে নেওয়া হয়।
৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করা হয়। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে তাদের আরেক সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। সিফাত ও শিপ্রা দুজনই পর জামিনে আছেন এখন।
র্যাব সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলার মোট আসামি ১৩ জন। তাঁরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস।
রিমান্ড শেষে এপিবিএনের তিন সদস্য কয়েক দিন আগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা তিনজন জেলা কারাগারে আছেন। ঘটনার সময় এপিবিএনের তিন সদস্য শামলাপুর তল্লাশিচৌকির দায়িত্বে ছিলেন। সিনহা হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে ২৮ আগস্ট তৃতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়েছিল র্যাব।